ভুঁড়ি কমানোর সহজ উপায়

100 0

পেটের মেদ একটি বিব্রতকর বিষয়। উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার যে পেটের মেদ বাড়ায় তা নয়, বেশি ক্যালরিযুক্ত যেকোনো খাবারই পেটের মেদ বাড়াতে পারে। একবার পেটে মেদ জমলে সেটা কাটিয়ে ওঠা যাবে না, এ ধারণা ভুল। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে অভ্যস্থ হলে সহজে মেদ কমিয়ে ফেলা সম্ভব। আপনি হয়তো মোটা না কিন্তু আপনার ভুরি অনেক বড় এবং দেখতে খারাপ দেখায়। তীরষ্কারও শুনতে হয় কাছের মানুষের। আর সেই কারণে আপনিও হয়তো ভুঁড়ি কমানোর সহজ উপায় খুঁজছেন।

ভুঁড়ি কমানোর উপায় বের করার আগে জানা জরুরি কোন ধরনের খাবারের কারণে পেটে মেদ জমতে থাকে। সাধারণত মদ্যপান, মিষ্টিজাতীয় খাবার অতিরিক্ত গ্রহণ, ডুবো তেলে ভাজা খাবার, কোমল পানীয়, অস্বাস্থ্যকর বাইরের খাবার, নিয়মিত লাল মাংস (রেড মিট) খাওয়া, স্যাচুরেটেড চর্বি গ্রহণ ইত্যাদি পেটের মেদ বাড়িয়ে তোলার পেছনে ভূমিকা রাখে। চলুন দেখে নেওয়া যাক ভুঁড়ি  বড় হওয়ার কারন সমুহঃ

যদি আপনি সঠিক ও নিয়মিত খাবার খান এবং ব্যায়াম করেন, তারপরও আপনার ভুঁড়ি  বাড়তে পারে। এর পেছনে অনেকগুলো জানা-অজানা কারন রয়েছে। আসুন দেখে নিই-

  • হরমোনের পরিবর্তন অথবা মিন্সট্রুয়াল পিরিয়ড
  • কিছু খাবারের সমস্যা- যেমন ব্রেড, দুধ ও মাংস পেটের মেদ বৃদ্ধি করে
  • এলার্জি থাকলে
  • প্রোটিন হজমে সমস্যা
  • ডিহাইড্রেশন বা পানি স্বল্পতা
  • কোষ্ঠকাঠিন্য

ওয়ের্ক ফোর্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা বলেন, যখন একই তেল বারবার ব্যবহার করা হয়, তখন সেখানে ট্রান্সফ্যাট উৎপন্ন হয়। ট্রান্সফ্যাট পেটের মেদ বাড়িয়ে দেয়। পেটের মেদ অতিরিক্ত জমে যাওয়ার আগেই সেটিকে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।

নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস ও সঠিক জীবনযাপনের মাধ্যমে আমরা শরীরের বাড়তি মেদ জমা বা ভুঁড়ি হওয়া থেকে রক্ষা পেতে পারি। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, পেটের মেদ বা ভুঁড়ি থেকে বাঁচতে কী করা যায়।

 

ভুঁড়ি কমানোর সহজ উপায় সমূহ :

 

  • খাদ্যতালিকায় ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। যেমন—লাল চাল বা লাল আটার তৈরি খাবার এবং শাকসবজি ও ফলমূলজাতীয় খাবারে মিলবে আঁশ।
  • গ্রিন-টিতে আছে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, যা পেটের মেদ কমাতে খুব খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখে। তাই ভুঁড়ি কমানোর জন্য দুধ ও চিনি বেশি দিয়ে চা পানের অভ্যাস বদলে চলে আসুন গ্রিন-টি এর দুনিয়াতে ।
  • আখরোট, কাঠবাদাম ও সামুদ্রিক মাছ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের উৎস। তাই এসব খাবার পেটের মেদ কমাতে কার্যকর।
  • ঝাল খাবার খান, পেটের মেদ কমে যাবে। অবাক হচ্ছেন? অবাক হবেন না। ঝাল খাবেন কিন্তু সেই ঝাল আসবে দারুচিনি, আদা, গোলমরিচ এবং কাঁচামরিচ থেকে। এসব রান্নায় ব্যবহার করুন। এই মসলা স্বাস্থ্যকর ও পেটের মেদ কমাতে কার্যকর।
  • কাঁচা রসুনের কয়েক কোয়া সকালবেলা চুষে খান। এই অভ্যাসের ফলে দ্রুত আপনার ওজন কমবে আর পেটের মেদ ঝরবে। কাঁচা রসুন শরীরের রক্তপ্রবাহ সহজ করে। পেটে মেদ জমতে দেয় না।
  • সকাল শুরু করুন এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে পান করে। এতে শরীরের হজমপ্রক্রিয়া ভালো থাকবে এবং শরীরে মেদ জমার প্রক্রিয়া ধীর হবে।
  • অতিরিক্ত চিন্তা ও কম উদ্যোগের ফলেও কোমরের চারপাশে বা পেটে মেদ জমতে পারে। তাই ভুঁড়ি কমাতে অবশ্যই চিন্তামুক্ত জীবনযাপন করতে হবে।
  • অনেকেই খাবার খাওয়ার পর বসে থাকেন বা শুয়ে পড়েন। তাদের খাবার সঠিকভাবে পরিপাক হয় না, ফলে পেটে চর্বি জমতে থাকে। সে জন্য খাবার খাওয়ার পর একটানা শুয়ে-বসে না থেকে ১৫ থেকে ২০ মিনিট হাঁটাহাঁটি করা উচিত।
  • যাঁদের সারা দিন টেবিল–চেয়ারে বসে কাজ করতে হয়, তাঁদের পেটে সহজে মেদ জমে যায়। ভুঁড়ি গোল হতে শুরু করে। তাই তাঁদের উচিত ৩০-৪০ মিনিট বসে কাজ করার পর উঠে ১০-১৫ মিনিট হাঁটাহাঁটি করা।
  • একবারে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ না করে অল্প অল্প করে বারবার খাবার গ্রহণ করুন। সারা দিনের অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টার খাবারকে ৫-৬ বারে গ্রহণ করুন। সেখানে তিনবার প্রধান খাবার ও দুই-তিনবার নাশতাজাতীয় খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন।

 

আরো কিছু ভুঁড়ি কমানোর সহজ উপায় :

 

লেবুপানি পান করুনঃ

আপনার হজমশক্তিকে পুনরুজ্জীবিত করতে প্রতিদিন সকালে খালিপেটে হাল্কা গরম পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন। অথবা সকালে গ্রীন-টির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে পান করতে পারেন। এই পদ্ধতি অনুসরণ করে আপনি খুব সহজেই পিটার মেদ কমিয়ে ফেলতে পারবেন।

 

শরীরের পানি স্বল্পতা কমানঃ

আপনি হয়তো ভাবতে পারেন, পানি বেশী খাওয়ার জন্য ভুঁড়ি বাড়ে কিন্তু নিয়মিত পানি পানে আপনার ভুঁড়ি কমতে থাকবে।বাইরে যাওয়ার আগে পানি পান করে বের হউন, হজমের জন্য এটা খুবই জরুরী।

 

দুধ দুগ্ধজাত খাবার বর্জন করুনঃ

অনেকেই আছে যাদের দুধ দিয়ে তৈরি কোন খাবার খেলে অস্বস্থি লাগে। আপনি যদি তাদের একজন হন, তাহলে আজই দুগ্ধজাত খাবার পরিহার করুন। খুব সহজেই ভুঁড়ি  কমাতে হলে দুধ, দই ও চিজ থেকে দূরে থাকুন। ভুরি কমানোর উপায় গুলোর মধ্যে একটি।

 

বেশী আঁশ যুক্ত খাবার খাবেন নাঃ

আঁশযুক্ত খাবার শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে। যদি আপনি আঁশযুক্ত খাবারে অভ্যস্ত না হয়ে থাকেন, তাহলে আঁশ যুক্ত খাবারই আপনার ভুঁড়ি  বাড়াতে পারে। এর কারণ হচ্ছে অতিরিক্ত আঁশযুক্ত খাবার হজম করার জন্য আপনার পেটে যথেষ্ট ব্যাক্টেরিয়া না থাকা।

 

মৌসুমী ফল খানঃ

পেটের মেদ কমাতে পেপে ও আনারস খুবই উপকারী। এসব ফলে রয়েছে পাপেন ও ব্রোমেলেইন যা প্রোটিন ভেঙ্গে হজমে সাহায্য করে।ভুঁড়ি কমানোর সহজ উপায় হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে।

 

যদি আপনি সারাদিন খাওয়ার উপর থাকেন তাহলে আপনার উচিৎ অল্প অল্প করে খাওয়া, তাহলে পেটে গ্যাস জমবে না।

 

উপরে উল্লেখিত নিয়মগুলি যদি আপনি মেনে চলেন, তাহলে খুব সহজেই ভুঁড়ি  কমাতে পারবেন। উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো থেকে আপনি নিশ্চয় ভুরি কমানোর উপায় সম্পর্কে একটা সঠিক ধারণা নিতে পেরেছেন।

Leave a Reply