আত্মহত্যাঃ মানসিক স্বাস্থ্য কতটা দায়ী?

118 0
আত্মহত্যাঃ মানসিক স্বাস্থ্য কতটা দায়ী

আত্মহত্যাঃ মানসিক স্বাস্থ্য কতটা দায়ী? ইদানিং অনেকেই আত্মহত্যাকে জীবনের সব কষ্ট, চাওয়া-পাওয়া আর দুঃখ থেকে মুক্তির উপায় বলে ভেবে নিচ্ছে। খুব হতাশা আর কষ্টের মুহুর্তে বেছে নিচ্ছে এই অন্ধকার পথ। আত্মহত্যা ব্যাপারটা নতুন কিছু নয়। মানব সভ্যতায় তো বটেই, অন্যান্য পশুপাখিদের ভেতরেও এই প্রবণতা কাজ করে। কিন্তু আত্মহত্যা কি শুধুই একটা নিছক হুট করে নেওয়া সিদ্ধান্তের ফল? আর দশটা ভুল কাজের মতন একটা ভুল?

গবেষণা কিন্তু তা বলে না। এক গবেষণায় পাওয়া যায় যে, শতকরা ৯০ শতাংশ মানুষ আত্মহত্যা করে মানসিক সমস্যা থেকে।এই সমস্যার ভেতরে আছে সিজোফ্রেনিয়া থেকে শুরু করে হতাশা, উদ্বিগ্নতা, অপ্রাপ্তির আক্ষেপসহ আরো অনেক ছোটোখাটো বিষয় যেগুলো প্রতিদিনের জীবনে আমাদের চোখ এড়িয়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত জীবনকেই হুমকির মুখে ফেলে দিতে সক্ষম।

গত মাসে হুট করে দুটো মৃত্যু বাংলাদেশকে নাড়িয়ে দিল। একটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনকেও স্তব্ধ করে দিল। মৃত্যুগুলো স্বাভাবিক নয়। আত্মহত্যা। প্রথমজনের নাম চেস্টার বেনিংটন। লিঙ্কিন পার্ক ব্যান্ডের ভোকাল।  আর পরেরজন জাহিন আহমেদ। বাংলাদেশের বিখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক মানাম আহমেদের ছেলে, মেকানিক্স ব্যান্ডের গিটারিস্ট।

কী সমস্যা ছিল এই দুজন মানুষের নিজেদের জীবনে? কতটা বেড়ে গিয়েছিল সেটা যে আত্মহত্যাকেই বেছে নিতে হল শেষ রাস্তা হিসেবে? আত্মহত্যার কারণ এখনও আজনা যায়নি এই দুজনের কারোরই। তবে সাফল্যের চুড়ান্ত শিখরে অবস্থান করা চেস্টার আর বাইরে থেকে দেখতে আপাতঃ সুখী ।জাহিনের এই সিদ্ধান্তের পেছনে কি মানসিক সমস্যাটুকুও বেশ পরিষ্কার না? চলুন জেনে আসি মানসিক স্বাস্থ্য আর আত্মহত্যার ভেতরেকার সম্পর্কটুকু।

আত্মহত্যা ও হতাশা

হতাশাকে মানুষের জীবনের খুব সামান্য ও সহজ একটা অধ্যায় বলে মনে করা হলেও এই হতাশাটুকুই বেড়ে বেড়ে একটা সময় ভয়ংকর রূপ ধারণ করতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুসারে, প্রতি বছর পৃথিবীতে মোট ১২৮ মিলিয়ন মানুষ হতাশায় ভুগে থাকেন। আর তাদের ভেতরে নারীর সংখ্যা সবচাইতে বেশি। সম্প্রতি ফিনল্যান্ডে এক ডাক্তারি গবেষণায় পাওয়া যায় যে, সুইসাইডের পেছনে যে কয়েকটি কারণ আছে সেগুলোর ভেতরে আছে হতাশা,উদ্বিগ্নতার মতন মানসিক সমস্যাগুলোও। কেন মানুষ হতাশ হয়ে পড়ে? জীবন নিয়ে মানুষের হতাশ হওয়ার কারণটা ব্যাক্তিভেদে ভিন্ন। কেউ সমস্ত সাফল্য অর্জন করে জীবনে নতুন কিছু আর না পাওয়ার কষ্ট থেকে আত্মহত্যার পথে বেছে নেয়। কেউ আবার নিতান্তই কিছু না পাওয়ার কষ্ট থেকে।

আত্মহত্যা ও সন্তান জন্মদান

বিষয়টি অনেকের কাছে বেশ আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি যে, সন্তান জন্মদানের সময় নারীদের মস্তিষ্ক খুব অদ্ভূতভাবে কাজ করে। হতাশা থেকে শুরু করে যাবতীয় নেতিবাচক চিন্তা এবং অনুভূতি বাসা বাধে তাদের মনে। এই সময় নারীরা ৭০ শতাংশ বেশি আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে থাকেন। শতকরা ৮ থেকে ১৫ শতাংশ নারীর ভেতরেই দেখা যায় এই মানসিক সমস্যার লক্ষণ। ফলে নিজের ভেতরে পুষে রাখা এই যন্ত্রণাটুকুও একসময় বিশাল বড় রূপ নিয়ে আত্মহত্যার পথে নারীকে ঠেলে দেয়।

আত্মহত্যা ও বাইপোলার ডিজঅর্ডার

মানসিক স্বাস্থ্যগত সমস্যার দিক দিয়ে বাইপোলার ডিজঅর্ডার ২য় অবস্থানে আছে। প্রতি ১,০০০ জন মানুষের ভেতরে ৫ জন এই সমস্যায় ভুগে থাকেন। সাধারণের চাইতে এই সমস্যায় ভুগে থাকা মানুষেরা ১৫ শতাংশ বেশি আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে থাকেন।

 

আত্মহত্যা ও সিজোফ্রেনিয়া

সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য আত্মহত্যার চেষ্টা করাটা খুব স্বাভাবিক একটা বিষয়। অন্যান্য মানুষের চাইতে শতকরা ৪০ শতাংশ বেশী আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে থাকে এরা। আর পৃথিবীতে এখন এই সমস্যায় ভুগছে প্রায় ২৮ মিলিয়ন মানুষ। এই রোগের রোগীদের ভেতরে শতরা ৬ থেকে ১৫ শতাংশ মানুষ আত্মহত্যা করে থাকেন।

তবে কেবল এই কয়েকটিই নয়, আত্মহত্যার পেছনে আছে মানসিক আরো সমস্যার অবদান। তবে রাস্তা যেটাই হোক, গন্তব্য তো একটাই। কারণ যেটাই হোক, এটা তো সত্যি যে, নিজেকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে নিতে হলে একেবারেই অন্যরকমভাবে ভাবতে হয়। আর সেই ভাবনাটুকু একটা স্বাভাবিক মস্তিষ্ক থেকে আসাটা একেবারেই সম্ভব নয়। কে জানে, হয়তো কাল আপনার মাথাতেও এমন কোন এক ভাবনা বাসা বাধতে পারে। আর তাই নিজেকে খুশী রাখুন। মানসিকভাবে ভালো থাকুন। যেকোন সমস্যা অনুভব করলেই দেখা করুন চিকিৎসকের সাথে। মানসিক স্বাস্থ্যের সেবা নিন। কারণ আর যেটাই করুন, সেটা যে আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্তের চাইতে যে বহুগুণে ভালো কিছু হবে এটা নিশ্চিত।

আত্মহত্যাঃ মানসিক স্বাস্থ্য কতটা দায়ী? আর্টিকেলটি কেমন লাগলো জানাবেন |

Leave a Reply