যে কোন শিশুই আক্রান্ত হতে পারেন নানান রকম সংক্রামক রোগে। কোন কোন ধরনের রোগ শিশুর জন্য মারাত্মক তা প্রত্যেক বাবা-মায়েরই জেনে থাকা দরকার। কোন রোগের কি ধরনের ভাইরাস, লক্ষণ, চিকিৎসা পদ্ধতি, প্রতিরোধের উপায়। তাই শিশুর সংক্রামক রোগ সম্পর্কে চলুন কিছু জেনে নেওয়া যাকঃ
হাম
লক্ষনঃ
- প্রচণ্ড জ্বর
- সর্দি
- কাশি
- চোখ লাল হয়ে যাওয়া
- শরীরে লালচে দানা দানা সহ উপরে একাধিক লক্ষণ দেখা দেওয়া
প্রতিরোধ ব্যবস্থাঃ শিশুকে টিকা দিতে হবে। প্রথম ডোজ দিতে হবে শিশুর নয় মাস পূর্ণ হলে এবং দ্বিতীয় ডোজ দিতে হবে শিশুর বয়স পনের মাস পূর্ণ হলে। এই টিকা শিশুর শরীরে চামড়ার নিচে দেওয়া হয়।
নবজাতকের ধনুষ্টঙ্কার
লক্ষনঃ
- শিশু জন্মের প্রথম দুই দিন পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবে মায়ের বুকের দুধ চুষে খেতে পারার পড়ে
- ০৩ থেকে ২৮ দিনের শিশুরা এই রোগে আক্রান্ত হয় সবচেয়ে বেশি।
- আক্রান্ত শিশু মায়ের বুকের দুধ চুষে খেতে পারে না।
- সারা শরীর শক্ত হয়ে যায়
- আক্রান্ত শিশুর শরীর বাঁকা হয়ে যায়।
এ রকম লক্ষণ দেখা দিলে আমার ধরে নিতে যে শিশুটি ধনুষ্টঙ্কারে আক্রান্ত। এই রোগটি এতোই ভয়াবহ যে আক্রান্ত শিশুর মৃত্যু অনিবার্য। এই রোগে আক্রান্ত শিশু মৃত্যুর হার ৭০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত।
প্রতিরোধঃ ধনুষ্টঙ্কারে আক্রান্ত হলে যেহেতু মৃত্যু অনিবার্য তাই শিশু জাতে এই রোগে আক্রান্ত হতে না পারে তার জন্য দরকার প্রতিরোধ মুলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। যেমনঃ-
১। গর্ভধারণের আগেই অথবা গর্ভধারণ অবস্থায় মায়ের ধনুষ্টঙ্কার প্রতিরোধ টিকা গ্রহণ করা
২। শিশুর জন্মদান পদ্ধতিটি হতে হবে সম্পূর্ণ জবানুমুক্ত পরিবেশে। বিশেষ করে নবজাতকের নাভির স্টাম্পটি জীবাণুমুক্ত কেঁচি দিয়ে কাটা।
কনজেনিটাল রুবেলা সিন্ড্রম
গর্ভবতী মা যদি এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে তাহলে জন্ম পরবর্তী শিশুরও এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে এবং মারাত্মক ত্রুটি নিয়ে জন্মায়। যেমনঃ
- বধির
- চোখের ছানি
- হৃদপিণ্ডের জটিলতা
- মানসিক প্রতিবন্ধকতা
- শারিরিক প্রতিবন্ধকতা
কনজেনিটাল রুবেলা সিন্ড্রোমের রোগী কারাঃ
- এক বছরের নিচের কোনো শিশুর কনজেনিটাল রুবেলা সিন্ড্রোমের লক্ষণ না থাকলেও যদি গর্ভকালীন অবস্থায় মায়ের সন্দেহজনক বা নিশ্চিত রুবেলা রোগের ইতিহাস থাকে।
- এক বছরের নিচের কোনো শিশু জন্মগতভাবে হৃদরোগে আক্রান্ত এবং/বা কানে শোনে না (বধির) বলে সন্দেহ হয় এবং/বা যেকোনো একটা চোখের জটিলতা থাকে: চোখের ছানি, চোখে ঝাপসা দেখা/কম দেখা, ছোট চোখ, ট্যারা চোখ, জন্মগত গ্লুকোমা (চোখের আয়তন বড়)
প্রতিরোধঃ আমাদের মনে রাখতে হবে, এটা যেহেতু একটা জন্মগত রোগ–তাই এর কোনো চিকিৎসা নেই। প্রতিরোধই আমাদের একমাত্র হাতিয়ার। তাই ১৫ বছর বয়স হয়ে যাবার পর প্রতিটি নারীকে একটি মিজেলস রুবেলা টিকা নিতে হবে অথবা গর্ভধারণের পরিকল্পনার আগে প্রতিটি নারীকে অবশ্যই একটি মিজেলস রুবেলা টিকা নিতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে, টিকা নেয়ার পর ৩ মাস গর্ভধারণ করা যাবে না।
ডিপথেরিয়া
কারণঃ ক্ষুদ্র এক প্রকার জীবাণু ডিপথেরিয়া রোগাক্রান্ত শিশুর হাঁচি কাশির মাধ্যমে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। ঐ জীবানু যখন সুস্থ শিশুর শরীরে প্রবেশ করে তখন এই রোগ দেখা দিতে পারে।
লক্ষণ
১-৩ দিন:
- শিশু খুব সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে
- শিশুর জ্বর, সর্দি ও কাশি দেখা দেয়
৪-৬ দিন:
- শিশু খুবই দুর্বল হয়ে পড়ে
- কন্ঠনালীর গ্রন্থিগুলি খুব বেশী ফুলে যায়
করনিয়ঃ শিশুর জম্মের এক বৎসরের মধ্যে ২৮ দিন বা একমাস পর পর তিন ডোজ ডিপিটি টিকা দিলে তা শিশুকে ডিপথেরিয়া থেকে রক্ষা করে।
হুপিং কাশি
কারনঃ হুপিংকাশিতে আক্রান্ত শিশু হাঁচি কাশি দেওয়ার সময় বাতাসের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায় এবং আক্রান্ত শিশুর সংস্পর্শেও এই রোগ ছড়ায়।
লক্ষণঃ শিশুর জ্বর হয়, নাক দিয়ে পানি পড়ে, চোখ মুখ লাল হয়ে যায়, কাশি দেখা দেয়।
করনীয়ঃ শিশুর এক বছর বয়সের মধ্যে ২৮ দিন বা এক মাস অন্তর অন্তর তিন ডোজ ডিপিটি টিকা দিয়ে শিশুকে হুপিং কাশি থেকে রক্ষা করা যায়। ৬ মাস বয়সের মধ্যেই শিশু মারাত্মকভাবে হুপিং কাশিতে আক্রান্ত হয়ে থাকে সে কারণে ৬ সপ্তাহ বয়স থেকেই ডিপিটি দেয়া শুরু করা অত্যন্ত জরুরী।
পোলিও
কারণঃ আক্রান্ত শিশুর মল দ্বারা দূষিত পানি খেলে বা আক্রান্ত শিশুর সংস্পর্শে এলে এই রোগ হতে পারে।
লক্ষণ
- শিশুর সর্দি, কাশি এবং সামান্য জ্বর হয়।
- মাথা ব্যাথা করে, ঘাড় শক্ত হয়ে যায়
- জ্বর থাকে
- শিশুর হাত অথবা পা অবশ হয়ে যায়
করনীয়ঃ এক মাস পর তিন ডোজ এবং হামের টিকা দেওয়ার সময় আরো একবার অর্থাৎ মোট চার বার পোলিও টিকা শিশুর এক বছর বয়সের ভিতরে খাওয়ানো হলে তা শিশুর দেহে পোলিও রোগ প্রতিরোধ করে।
উপরের যে সব রোগ গুলো নিয়ে আলোচনা করা হল, এসবে কোনো শিশু আক্রান্ত হলে যতো দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যান। আর সার্বিকভাবে শিশুমৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে খবর দিন নিকটস্থ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।