যান্ত্রিক এই শহরে যন্ত্রের মতন কাজ করা আর ছুটে চলা- এটাই যেন আজকাল আমাদের জন্য খুব স্বাভাবিক জীবন হয়ে গিয়েছে। আজ মানুষের সামনে কী নেই? দ্রুত কাজ করে দেওয়ার যন্ত্র, কাজ মনে করিয়ে দেওয়ার যন্ত্র, মন ভালো না লাগলে বিনোদনের খোরাক যোগাবে এমন যন্ত্র, বন্ধুর কথা মনে পড়েলেই তাকে নাগালের ভেতরে এনে দেবে এমন যন্ত্র! কিন্তু তারপরেও কি মানুষ সুখী? না! আর আপনিও কি আরো অনেকের মতন এই শহরের বুনোটে আটকে পড়া আপাতত সুখী, মানসিকভাবে অসুখী একজন? তাহলে চলুন জেনে নিই আজ প্রতিদিনের ছোট্ট কিছু কাজের কথা যেগুলো আপনাকে সহজেই সুস্থ রাখবে মানসিকভাবে।
১। মানুষের সাহায্য করা
আমরা সবসময় নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকি, নিজের কারণেই ছুটে বেড়াই। কিন্তু থামুন। একটু চারপাশে তাকান। অনেক মানুষ কষ্ট পাচ্ছে? তার সাহায্য দরকার? বিনা স্বার্থে এগিয়ে যান,সাহায্য করুন। আপনি তাৎক্ষণিক অনেক মানসিক প্রশান্তি পাবেন। আর মনে রাখবেন আপনার এই সাহায্য ঘুরে আপনার কাছে অবশ্যই আসবে। মানসিকভাবে সুখী করবে আপনাকেই। প্রতিদিন চেষ্টা করুন অন্তত একজন মানুষকে সাহায্য করতে।
২। নিজেকে সময় দিন
নানারকম কাজে নিজেকেই ভুলে গিয়েছেন? আপনার চাওয়া কী ছিল? কী হতে চেয়েছিলেন? মনে করে দেখুন। খানিকটা সময় নিজেকে দিন। নিজের ভালোলাগার জন্য কিছু সময় আলাদা করে রাখুন। পুরোন কোন মধুর স্মৃতি আছে? সেটাকে মনে করুন। বন্ধুদের সাথে ফেইসবুক বা টুইটারে নয়, সামনাসামনি দেখা করুন। কথা বলুন। প্রাণখুলে আড্ডা দিন। ভালো লাগবে। আর কিছু না হোক, প্রতিদিন অন্তত একজন বন্ধুর সাথে ফোনে কথা বলুন। ফোনের ওপাশ থেকে তার কন্ঠ শুনেও মন ভালো হয়ে যেতে পারে আপনার।
৩। নিজেকে সাহায্য করুন
কোন কাজ পারছেন না? তাহলে অন্যের সাহায্য চান। ছোটোখাটো ব্যাপারগুলোতে রাগ হয়ে যায় জলদি? অন্যদের সাহায্য নিয়ে রাগ দমানোর চেষ্টা করুন। নিজের কমতিগুলোকে মেনে নিন। নিজেকে আরো ভালো পর্যায়ে নিতে নিজেকে সাহায্য করুন। নিজের শত ব্যস্ততার মাঝেও সময় ভাগ করে নিয়ে নিজের কাজ নিজে করে নিন। এতে অন্যের ভরসায় থেকে মন মেজাজ খারাপ হবে না এবং কাজের কারণে যে পরিশ্রম হবে তা আপনার দেহকেও সুস্থ রাখবে। মানসিকভাবেও সুস্থ থাকবেন আপনি।
৪। নিজেকে খুশী রাখুন
অন্যের কথা অবশ্যই ভাববেন। তবে প্রতিদিন কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়, কোন কাজ করার সময় সেটা আপনাকে খুশী দিচ্ছে কীনা একবার ভেবে নিন। কারণ সবাই খুশী থাকলেও দিনশেষে আপনি খুশী না থাকলে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পরবেন, অসুস্থ হয়ে পড়বেন আপনিই!
৫। সবার সাথে ভালো ব্যবহার করুন
জীবনে অনেক খারাপ সময় যাচ্ছে,অনেক কষ্টে আছেন? কিন্তু তার মানে এই নয় যে, এই ব্যাপারটি অন্যে কারো উপর বাজে ব্যবহার করে প্রকাশ করবেন আপনি। সব সময় ভালো ব্যবহার করার অভ্যাস রাখুন। ভেবে দেখুন, আপনি যেমন কষ্টে আছেন, সামনে যার সাথে আপনি খারাপ ব্যবহার করছেন তিনিও হয়তো আপনার মতো কোনো কষ্টে আছেন। হয়তো এই একটা দিনের খারাপ ব্যবহারের কারণেই পরবর্তীতে গোটা সম্পর্কটাই নষ্ট হয়ে যাবে আপনাদের ভেতরে। তাই চেষ্টা করুন সবার সাথে ভালো ব্যবহার করতে।
৬। নিজের যত্ন নিন
ভাবছেন নিজের যত্ন নেয়াটা আবার কেমন? এই যেমন- প্রতিদিনের শারীরিক সুস্থতার কাজগুলো অবহেলা না করা, নিজেই নিজের ঘরদোর পরিষ্কার রাখা,নিয়মিত দাঁত ব্রাশ ও গোসল করা,নিজের বিছানা প্রতিদিন পরিষ্কার করা,বিছানার চাদর ও কভার বদলে দেওয়া, নতুন কোন চুলের স্টাইল করা ইত্যাদি। আপনার ছোট্ট এই কাজগুলোতে আপনার মানসিক সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করবে।
৭। হাঁসুন
মানুষ যেমনটা বাইরে দেখায় সেটাই ভেতরেও অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। খুব মন খারাপ? একটু হেসে দেখুন? দেখবেন চট করে একটু হলেও আপনার মন ভালো হয়ে গিয়েছে। আর তাই হাসুন। হাসি স্বাস্থ্য ও মন দুটোর জন্যই স্বাস্থ্যকর। জীবনে কান্নার কারণ অনেক আছে। তবে একটু হাসার কারণ কিন্তু কম নেই। ছোট একটি ব্যাপারে হাসা কিন্তু খারাপ কিছুই নয়,বরং এটিই আপনার মনের ভেতরের পবিত্রতা প্রকাশ করে। তাই হাসুন এবং অন্যের মুখে হাসি ফোটান। মানসিকভাবে সাবলীল ও সুস্থ থাকুন।
৮। পরিমিত ঘুমানো
অনেক সময় অতিরিক্ত কাজ ও তাড়াহুড়োর কারণে আমাদের ঘুম ঠিকঠাক হয়না। তাই চেষ্টা করুন অন্তত ৬-৭ ঘন্টা প্রতিদিন ঘুমাতে। সেইসাথে পারলে বিকেলে একটা ছোট্ট ঘুম দিয়ে ফেলতে পারেন। তাতে করে আপনার শরীর ও মন দুটোই হয়ে উঠবে চনমনে।